ওগোপোগো

চলচ্চিত্রের খোঁজখবর যারা রাখেন তাদের কাছে ওগোপোগো নামটা অপরিচিত নয়। তবে অন্যদের কাছে মনে হতেই পারে_ ওগোপোগো! এ আবার কেমন নাম? এটি রহস্যময় এক জলদানবের নাম। এই জলদানবের বাস্তবিক ভিত্তি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না গেলেও এর অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। অনেকেই বিশালাকারের এই জলজ প্রাণীটিকে দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। আর সেখান থেকে নির্মিত হয়েছে একাধিক চলচ্চিত্রও। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছবিটি হলো_ 'মি শী: দ্য ওয়াটার জায়ান্ট'। সত্যিকার অর্থেই কি এমন কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে? থাকলে তা দেখতে কেমন? একে ঘিরে এত আকর্ষণের কারণইবা কী?



কিম্ভূতদর্শন এক জলজ প্রাণী ওগোপোগো। ইতিহাসে প্রথম এই প্রাণীটির প্রসঙ্গ আসে ১৮৬০ সালে। ওই সময় কিছু ইউরোপিয়ান উপনিবেশবাসী প্রথমবারের মতো এই দানব প্রাণীর দর্শন লাভ করে। প্রথম প্রথম অনেকেই একে বিভ্রম আর অবচেতন মনের কল্পনা বলে চালিয়ে দেয়। কিন্তু ক্রমে অনেকেই দেখতে লাগলেন ওগোপোগো। ১৯২৬ সালের দিকে অনেকেই দেখেন একে। এ ঘটনা ঘটে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ওকানাগান মিশন বিচে। সেখানে প্রায় ৩০টি গাড়িভর্তি মানুষ ওগোপোগোর ঘটনা প্রত্যক্ষ করে বলে জানা যায়। তখন 'ভ্যানকুভার সান'-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীরা আসলে প্রকৃত ঘটনা না বুঝে এরকম ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে। ফলে 'ওগোপোগো' আসলেই আছে- নাকি এটা দেখার ভুল এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে ওকানাগানের উপজাতিরা একে খুব মেনে চলেন। যে হ্রদে ওই অদ্ভুত প্রাণী দেখা গিয়েছিল, তার আশপাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা সতর্কতা অবলম্বন করেন। ব্রিটিশ প্রাণীবিজ্ঞানী কার্ল শাবার আবার ওগোপোগোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেণীবিন্যস্ত করার প্রস্তাব দেন। তার মতে, এটি আদিম সর্পলিকার তিমির কোনো প্রকরণ হতে পারে। আবার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি ভোঁদড় বা উদ-বেড়ালগোছের কিছুও হতে পারে। এদিকে স্থানীয় লোককাহিনীতেও এ প্রাণীর উল্লেখ রয়েছে। সেখানে একে 'হ্রদের পানিতে বৃহৎ পশু' হিসেবে বর্ণনা রয়েছে। এ কাহিনীও অবশ্য গড়ে উঠেছে ইতিহাসের অনির্দিষ্ট কোনো এক সময়ে আদিবাসীরা এ রকম এক জীব দেখেছিল এ তথ্যের ভিত্তিতে।
কিন্তু ওগোপোগোটা আসলে কী? এক কথায় বলতে গেলে এ হলো হ্রদের দৈত্য। বিভিন্ন সময়ে যাকে মানুষ দেখেছে। তবে এ সম্পর্কে তাদের বর্ণনা একরকম নয়; বরং ভিন্ন ভিন্ন অদ্ভুত প্রাণীর আকৃতি নির্দেশ করে। ওগোপোগো দেখতে কী রকম, এ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। এর মধ্যেই কানাডার চিত্রপরিচালক কেন চ্যাপলিন একদিন সাপের মতো দেখতে একটি বিশাল প্রাণীকে হ্রদে সাঁতার কাটতে দেখেন। প্রাণীটি তখন লেজ ঝাঁপটে পানিতে দাঁপিয়ে বেড়াত। এ সময় কেন চ্যাপলিনের বাবা ক্লেম চ্যাপলিনও সঙ্গে ছিলেন। ওরকম অদ্ভুত প্রাণী তারা আগে কখনো দেখেননি। চ্যাপলিন এটিকে 'ওগোপোগো' হিসেবে শনাক্ত করেন। এ নিয়ে ১৯৮৯ সালে তিনি নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র। অনেকে অবশ্য দাবি করেন, চ্যাপলিন পানিতে আসলে 'বিভার' নামের একটি উভচর প্রাণী দেখেছিলেন। কারণ তার বর্ণনার সঙ্গে বিভারের বৈশিষ্ট্যই বেশি মেলে। তবে একটি সমস্যা হলো, বিভার যখন লেজ ঝাপটায় তখন তার মাথা থাকে পানিতে নিমজ্জিত অথবা পানির সমান্তরালে ভাসমান। আর চ্যাপলিনের মতে, তার দেখা প্রাণীটি ১৫ ফুটের মতো লম্বা। অথচ বিভার সাধারণত ৪ ফুট লম্বা। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরই চ্যাপলিন তার বাবা ও কন্যাসহ দ্বিতীয়বার এ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। যদিও এর আগে ১৯৬৮ সালে প্রথম ওগোপোগো নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করেন অটি ফোল্ডেন।
১৯৯০ সালে এক চিত্রশিল্পী তার ধারণা থেকে একে চিত্রায়িত করেন, যা কানাডার ডাকটিকিটে ব্যবহার হয়। 'ফাইনাল ফ্যান্টাসি-৪' নামক একটি ভিডিও গেমে একে অ্যানিমেটেড করা হয়। ১৯৯৬ সালে মাইক্রোসফট পাবলিশার ওগোপোগোকে বেছে নেয় বিশেষায়িত প্রতীক ও কোড নেম হিসেবে। এদিকে কানাডার আদিম অধিবাসীরা জলের দেখা এ দৈত্যের নাম দিয়েছিলেন 'নিয়াটেকা'। ১৯২৬ সালে ওই এলাকার আধুনিক অধিবাসীরা এর নাম দেন ওগোপাগো। আর এ নামটি নেওয়া হয় ১৯২০ সালের একটি হাস্যরসাত্মক গান (আই অ্যাম লুকিং ফর দ্য ওগোপোগো...) থেকে। কানাডায় অবশ্য এক ধরনের নৌকার নামও ওগোপোগো। ২০০৫ সালে নিউজিল্যান্ডে ওগোপোগোকে নিয়ে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। আদিবাসীরা তখন 'ওগোপোগো' নামটি ব্যবহারে বাধা দেয়। তবে তাদেরই কিছু অংশ ওই নাম দিয়ে সিনেমা বানাতে উৎসাহী করেন পরিচালককে। শেষ পর্যন্ত সিনেমার নাম বদলে রাখা হয়, Mee-Shee : The water giant। এখানে অদ্ভুত দর্শন জীবটির নাম দেওয়া হয় 'মি-শি'।

রণক ইকরাম
Posted by — Tuesday, February 22, 2011

Belum ada komentar untuk "ওগোপোগো"

Tambahkan komentar anda :

Advertisement