দেশটির আবহাওয়া এতটাই রুক্ষ এবং পাথুরে যে সেখানে প্রাণী বৈচিত্র্য নগণ্য। দেশটির তপ্ত-রুক্ষ পরিবেশে টিকে থাকাটা যে কোন প্রাণীর জন্যই কঠিন। কিন্তু শুনে অবাক হতে হয়, আজ থেকে প্রায় ৪ কোটি বছর আগে বর্তমানের এই মরুভূমির দেশেই জলজ প্রাণীর প্রচুরতা ছিল! তন্মধ্যে থেকে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সিংহভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিছু প্রাণী বিবর্তিত হয়ে আজও টিকে আছে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া একটি জলজ প্রাণীর নাম জিউগলোডন সেটোইডেস।
উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকায় আমদানীকৃত এক প্রকার প্রাণীর বড় আকৃতির ফসিল দিয়ে ফার্নিচার তৈরি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফসিলগুলো নিয়ে জজ ব্রির মনে প্রশ্ন জাগে। তিনি ফসিলের মেরুদ-ের একটি টুকরো পাঠিয়ে দেন আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটিতে। এনাটমিস্ট ড. রিচার্ড হারলেন ফসিল টুকরোটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঘোষণা দিলেন যে এটি একটি সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী, নাম রাখলেন বাসিলোসাওরাস সেটোইডেস , যার অর্থ বিশাল-সরীসৃপ। বলা যায় তখন থেকেই এই বিশেষ প্রাণীর পরিচয় নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শুরু। পরবর্তীতে ড. রিচার্ডই ফসিলের অন্যান্য অংশ সংগ্রহ করে পূনরায় গবেষণা চালান। গবেষণা শেষে তিনি তার মত পাল্টান। তিনি বলেন এটি এমন এক প্রজাতির তিমির ফসিল যা দেখতে লাঙলের ফলার মতো। এবার ফসিলের নাম দেন জিউগলোডন সেটোইডেস। কিন্তু ততদিনে আগের ভুল নামটিই জনপ্রিয় হয়ে গেছে।
আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা যে বিস্তৃত মরুভূমি দেখি, বিজ্ঞান বলে প্রায় ৪ কোটি বছর আগে এটি ছিল একটি সমুদ্র। যা শুকিয়ে বর্তমানে দিগন্তজোড়া ধূধূ মরুভূমিতে রূপ নিয়েছে। এই মরুভূমির একটি বিশিষ্ট অংশ মিশরের উত্তরাঞ্চ। বিশেষ করে নীল নদের ব-দ্বীপ এবং এর আশেপাশের মরুভূমি। নীল নদের ব-দ্বীপ এবং এর আশেপাশের মরুভূমিকে বিজ্ঞানীরা এক সময়কার টেথিস সমুদ্রের অংশ বলে চিহ্নিত করেন।
ভৌগলিক কোন কারনে এই টেথিস সমুদ্র শুকাতে শুরু করে। ফলে অনেক বড় বড় জলজ প্রাণী ছোট ছোট গর্তে আটকা পড়ে এবং এক সময় মারা যায়। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জলজ প্রাণীর মধ্যে ছিল কিছু অদ্ভূত প্রজাতির বিশাল আকৃতির তিমি। ড. রিচার্ড হারলেন যার নাম দিয়েছিলেন জিউগলোডন সেটোইডেস।
তিমিগুলো সরু বাইনমাছ আকৃতির। গড়ে ২০ মিটার লম্বা (প্রায় ৬৬ ফুট)। এর ভয়ঙ্কর চোয়ালে ছিল করাতের মতো দাঁত। এই তিমির সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং বিশিষ্ট দিক হলো এর প্রসারিত শরীর। এখনকার সাধারণ তিমির মতো বেলুন আকৃতির ছিল না এই তিমির শরীর। এই তিমির শরীর ছিল অনেকাংশেই সাপের মতো। তাই ‘না তিমি না সাপ’ বলে এই আজব তিমিকে ব্যাখ্যা করা হয়। শরীরের গঠন সাপের মতো হলেও যেহেতু জলজ প্রাণী সেহেতু এর আছে সাঁতার কাটার জন্য লেজ ও ডানা। এই প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট আকৃতির তিমিকে বলা হয় ডরুডন। সর্বোচ্চ ৫ ফুট লম্বা।
তিমিগুলোর ফসিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মিশরের ওয়াদি আল-হিতানে। মিশরের আল-ফাইয়াম থেকে ওয়াদি আল হিতান যেতে গাড়িতে করে ২ ঘন্টা লাগে। ১৫ ধরনের বন্য স্তন্যপায়ী, ১৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৬ প্রজাতির পাখি, এবং ১৫ প্রজাতির গাছের ফসিলসহ মোট ২শ ৪০টি ফসিল সেখানে সংরক্ষিত আছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় মরুভূমির আজব তিমি, জিউগলোডন সেটোইডেস। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো ওয়াদি আল-হিতানকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইউনেস্কোর মতে, আল হিতান এমন এক স্থান যা পৃথিবীর প্রাণীকূলের বিবর্তনের একটি ইতিহাস ধরে রেখেছে, বিশেষ করে তিমির বিবর্তনের ইতিহাস।
Belum ada komentar untuk "জিউগলোডন সেটোইডেস"
Tambahkan komentar anda :