কোরাল

কোরাল একটা প্রাণী। যদিও এরা নিজেদের খাবার নিজেরা বানায় না। কোরালের মুল উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বনেট। ক্যালসিয়াম কার্বনেট হলো ‘হাড়’। তাই এর রং সাদা।
 

পানির মধ্যে যে কোরাল আমরা দেখি তা সাধারনত: বিভিন্ন রং এর হয়। মুলত: জীবিত থাকা অবস্থায় ‘অ্যালগি’ কোরালের উপর বাস করে। এই অ্যালগি-ই কোরালকে খাদ্য সরবরাহ ও করে। অ্যালগির রং এর জন্যই জীবিত কোরাল দেখতে বিভিন্ন রং এর হয়।
 
কোরাল সাদারনত: বছরের নির্দ্রিস্ট সময়ে অন্চল ভেদে ডিম ছাড়ে (Spawning)। রিফ এর কোরাল প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম পূর্নিমার পরে প্রথম থেকে ছয়দিনের মধ্যে স্প্যানিং করে। ওই সময় পানির তাপমাত্রা থাকতে হয় ২৭ ডিগ্রি। ১৯৯৫ সালের ‘ব্লিচিং’ এ অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এর অর্ধেক কোরাল মরে যায়। যেসব কোরাল বেঁচে থাকে তারা প্রকৃতির সাথে কিছুটা খাপ খাইয়ে নিয়ে এখন সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায়ও স্প্যানিং করতে পারে।
 
কোরাল যখন প্রকৃতিগতভাবে হুমকির মুখে পড়ে, তখন সে তার সবথেকে বড় বন্ধু, খাদ্য সরবরাহকারী ‘অ্যালগি’ কে ‘কিক আউট’ করে। কারন, যখন পানির তাপমাত্রা বেড়ে যায়, অ্যালগি, কোরাল কে খাবার দেবার বদলে বিষ নি:সরন করে যেটা কোরাল সহ্য করতে পারে না। এই কোরাল দ্বারা অ্যালগি কে কিক আউট করাকেই ‘ব্লিচিং’ বলে।
 
কোরাল ব্লিচিং করলে তাকে খাদ্য দেবার আর কেউ থাকে না, তাই কোরাল কিছুদিনের মধ্যে আস্তে আস্তে মারা যায় এবং তার অরিজিনাল সাদা রং ফিরে পায়।
 

স্প্যানিং এর পরে নিষিক্তকরনের মাধ্যমে যে নতুন কোরাল জন্ম নেয় তারা সাধারনত: মরা কোরালের উপর বসতি তৈরী করে। এজন্য কোরাল আহরন করা নিষিদ্ধ। যদিও অস্ট্রেলিয়ায় ১১ জনের মরা কোরাল উত্তোলনের জন্য লাইসেন্স আছে, তাদেরকে একটা বড় অংকের টাকা সরকারকে দিতে হয় মরা কোরাল উত্তোলনের জন্য। সরকার ঐ টাকা নতুন কোরাল উৎপাদনের ব্যবস্থা করার জন্য খরচ করে।
 
কোরাল বিভিন্ন আকৃতি ও শেপের হয়ে থাকে।
 
কোরাল সাধারনত: পানির সর্বোচ্চ ২০০ ফিট নীচে বাঁচতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে পৃথিবীর সবথেকে বেশী কোরাল পাওয়া যায়।

Labels: কোরাল

হ্যান্ডফিস

প্রায় ২০০ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণপূর্ব তাসমানিয়া সমুদ্রের তলদেশে হারিয়ে যাওয়া “স্মুদ হ্যান্ডফিস” নামের এই বিষ্ময় মাছের অস্তিত্ব আবিষ্কার করলেন মেরিন বিজ্ঞানীরা। 


১৮০২ সালে সমুদ্রের তলদেশে প্রথম এই অদ্ভুত চেহারার বিশেষ প্রজাতির মাছ খুঁজে পান ফ্রেঞ্চ পরিবেশ বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্কোইস পেরন। তারপর থেকে প্রায় ২০০ বছর এই মাছের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি বলে IUCN (International Union for Conservation of Nature) এর পক্ষ থেকে এই “স্মুদ হ্যান্ডফিস”-কে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। 

২০১৭ সালে বিজ্ঞানী পেরন “বায়োলজিক্যাল কনজারভেশন” নামের একটি UK Journal -এ এই মাছ সম্পর্কিত একটি লেখাতে বলেছিলেন যে খুব লাজুক ও শান্ত প্রকৃতির এই মাছ সমুদ্রের একেবারে তলদেশে ছোট্ট পরিসরে থাকতে পছন্দ করে। 

এদের দেহের মাপ ৬ ইঞ্চি থেকে ৮ ইঞ্চি ও আকৃতি অদ্ভুত ধরণের হয়ে থাকে। এই মাছ অন্যান্য মাছেদের মতো জলে ভেসে বেড়াতে পারে না। এদের ঘারের দুপাশ থেকে দুদিকে দুটি পাখনা বের হয় যা দেখতে অবিকল মানব শরীরের হাতের মতো, আর তাই দিয়ে এরা সমুদ্রের তলদেশে খুব ধীরে ধীরে হেটে চলাফেরা করে। এই জন্যই তাদের নাম দেওয়া হয়েছে “স্মুদ হ্যান্ডফিস”। 

এই মাছের প্রায় ১৩ টি প্রজাতি রয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসের ১৫ তারিখে তাসমানিয়া সমুদ্রের তলদেশে মেরিন বিজ্ঞানীরা আবার নতুন করে এই হ্যান্ডফিসের সন্ধান পেয়ে অত্যন্তই খুশি বলে জানিয়েছেন Conservation Organisation of UK-র চিফ ইকোলজিস্ট ড: গ্রাহাম এডগার। IUCN এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ফিরে পাওয়া এই বিরল প্রজাতির হ্যান্ডফিস সংরক্ষনের বিষয়ে যাবতীয় কাজ করছেন মেরিন বিজ্ঞানীরা।

নীল বোতাম

‘নীল বোতাম’ বা ‘Blue Button’ উজ্জ্বল নীল রং এর সামুদ্রিক প্রাণী। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে দেখা মেলে হাইড্রোজোয়া প্রজাতির এই প্রাণীর। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পাঁচ প্রজাতির হাইড্রোজোয়াসহ ২১ প্রজাতির নিডারিয়া পর্বের প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে। নীল বোতাম হাইড্রোজোয়া প্রজাতির প্রাণী। দক্ষিণ-পশ্চিম তীব্র মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধির সঙ্গে এই প্রাণীর উপস্থিতির সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। বেশি সংখ্যায় এই প্রাণীর উপস্থিতি সামুদ্রিক খাদ্যচক্র ও জলজ জীববৈচিত্র্য প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্বসমুদ্রের নানা অংশে হাইড্রোজোয়া শ্রেণির, বিশেষ করে ভাসমান জেলিফিশ প্রজাতির প্রাণীর আধিক্য আগের চেয়ে অনেক বেশি দেখা যায়।
নীল বোতাম প্রাণী বিশ্বে প্রথম কখন কোথায় দেখা যায়, সে-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে ১৯০৪ সালে পানামা উপকূলে এ প্রাণী দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায় ১৯৬৫ সালে। ভারতের তামিলনাড়ুর উপকূলে ২০১৩ সালে এ প্রাণীর উপস্থিতি শনাক্ত হয়। আর বাংলাদেশে সন্ধান মেলে ২০১৪ সালে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও চীনের উপকূলে এ প্রাণী দেখা যায়। প্রাণীটি বোতাম আকৃতির গোলাকার ডিস্ক সদৃশ অ্যাবোরাল অংশ ও অসংখ্য ঝুলন্ত টেন্টাকল এবং পলিপ সমৃদ্ধ ওরাল অংশের সমন্বয়ে গঠিত। অ্যাবোরাল অংশের উপরিভাগ বাতাস ধারণে সক্ষম অসংখ্য কাইটিনাস টিউব দ্বারা গঠিত। যার পরিধি ১৬ মিমি পর্যন্ত হতে পারে। এই অংশের সাহায্যে প্রাণীটি সমুদ্রের পানির উপরিভাগে ভেসে বেড়ায়। এই প্রাণীর উপরিভাগ এবং ঝুলন্ত পলিপের মধ্যবর্তী স্থানটি সিনোসার্ক (Coenosarc) নামে পরিচিত। যা মেসোগ্লিয়া (Masoglea) দিয়ে গঠিত। এই প্রাণীটি কোপিপোড (প্রাণিজ খাদ্যকণা) এবং নানা সন্ধিপদী প্রাণীর লার্ভি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে, যা অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্যসংকট ঘটিয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অধিক সংখ্যায় এই প্রাণীর উপস্থিতি সামুদ্রিক খাদ্যচক্রকেও প্রভাবিত করতে পারে।

সূত্র: প্রথম আলো

মি. বল্গবি

২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ডে সামুদ্রিক প্রাণী গণনার জন্য যে অভিযান চালানো হয়, সেটার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো খুঁজে পাওয়া যায় এই অদ্ভুতদর্শন মাছটি।
দেখতে বুড়ো মানুষের মতো এই মাছটিকে আদর করে ডাকা হয় মি. বল্গবি নামে। বড় গেল্গাব আকৃতির মাথা, ঝোলানো চামড়ার এই প্রজাতির মাছ প্রশান্ত, আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগরে ৩৩০ ফুট থেকে ৯২০০ ফুট গভীরতার মধ্যে বাস করে। গোলাকার এবং নরম মাছটি দেখতে অদ্ভুতই বটে।

ক্যাটফিশ

আমাজন রেইন ফরেস্টের এক ধরনের মাছ ক্যাটফিশ; যারা শুধু কাঠ খেয়ে বেঁচে থাকে। তাই তাদের কাঠখেকো মাছ বলা হয়ে থাকে। এদের দাঁত ধারালো এবং ঠোঁট অনেক শক্ত হয়ে থাকে। এই দাঁত দিয়েই তারা বড় বড় গাছ রীতিমতো সাবাড় করে দেয়। তবে সত্যিটা হলো, এসব ক্যাটফিশ কেবল শখ করেই কাঠ খায়। কিন্তু তা হজম করার সামর্থ্যটুকু তাদের নেই। এই মাছেরা যে কাঠ খায় তার গায়ে লেগে থাকা বিভিন্ন খাদ্যকণাই কেবল তাদের পেটে থাকে। আর পেটে যাওয়া কাঠগুলো শেষ পর্যন্ত বর্জ্য আকারে বের হয়ে আসে। পেরুর লোকজন এই মাছটাকে বেশ পছন্দই করে। তারা এই মাছের স্যুপ ও বিভিন্ন খাবার বানিয়ে খায়। এদের শরীরে শক্ত একটা খোলস থাকে। এই খোলস সরিয়ে ফেললেই মাছগুলো হয়ে যায় খাবার উপযোগী। আর তখন এদের দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন উপাদেয় খাদ্য। লম্বায় এই ক্যাটফিশগুলো আড়াই ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। কাঠখেকো ক্যাটফিশগুলো থাকে আমাজনের বিভিন্ন নদীর তলায় শক্ত পাথরের নিচে। এই ক্যাটফিশগুলোর মাথার দিকে ব্রাশের মতো পাখনা ছাড়াও একাধিক পাখনা আছে। বিপদে পড়লে এসব পাখনা ছড়িয়ে এবং দাঁত বের করে ভয় দেখাতে পারে।
 

ঝিনুক

মূল্যবান রত্ন হিসেবে মুক্তার কদর রয়েছে বিশ্বজুড়ে। আর এই মুক্তা তৈরি হয় দুটি শক্ত খোলকবিশিষ্ট প্রাণী ঝিনুকের ভেতরে। ঝিনুক (ইংরেজি: Oyster) একটি অমেরুদণ্ডী জলজ প্রাণী। এর নরম শরীরটি দুটি শক্ত খোলস আবৃত করে রাখে। এই খোলস দুটি কব্জার মতো এক জায়গায় আটকে থাকে। ঝিনুকের মাথা ও চোখ নেই। বেশির ভাগ ঝিনুকের বাস সমুদ্রে হলেও মিঠা পানিতেও কয়েক প্রজাতির ঝিনুক পাওয়া যায়। একটি মা ঝিনুক বছরে প্রায় ৫০ কোটি ডিম পাড়ে। এই ডিম থেকে বাচ্চা হতে মাত্র ১০ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। অর্থনৈতিকভাবে ঝিনুক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাণী। ঝিনুক থেকে মুক্তা সংগ্রহ ছাড়াও ঝিনুকের খোলস থেকে চুন তৈরি হয় এবং বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জার উপকরণ তৈরিতে ব্যবহার হয়। পৃথিবীব্যাপী ঝিনুক মানুষের প্রিয় খাদ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। ঝিনুকে জিংক, লৌহ, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়ামসহ ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি১২-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান রয়েছে। শুধু মানুষ নয়, বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী বিশেষ করে হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবেও ঝিনুকের ব্যবহার হয়। ফলে বাণিজ্যিকভাবে ঝিনুকের চাষ অত্যন্ত লাভজনক। বাংলাদেশে প্রাপ্ত ঝিনুক থেকে সাধারণত গোলাপি ও চুর_দুই ধরনের মুক্তা পাওয়া যায়। এর মধ্যে গোলাপি মুক্তার বিশ্বজুড়ে মানসম্মত মুক্তা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে।

গ্রন্থনা : তৈমুর ফারুক তুষার
Labels: ঝিনুক

কাঞ্জন পুঁটি

কাঞ্জন পুঁটি এদের শরীর রুপালী, পিঠ কালো, আশেঁর গোড়া কালচে। অন্যান্য পুঁটির চেয়ে পুরু ও চওড়া, ১০ সে,মি পর্যন্ত লম্বা। বার্বেল নেই। পায়ু-পাখনার পেছনে উপর দিক একটি বড় কালো ফোটা আছে। প্রজননকালে কোন কোনটির পাশ লাল ও বেগুনি রং ধারণ করে। স্বাদু পানিতে সর্বত্র বিস্তৃত।
Labels: পুঁটি

Advertisement