সুবিধা
দেশি কৈয়ের চেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল। আমাদের দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু এ মাছ চাষে উপযোগী। সম্পূরক খাবারে সহজে অভ্যস্ত বলে চাষ সুবিধাজনক। ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি তেমন কঠিন নয়। বিদেশে এ মাছ রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। চাষের জন্য ভালো পোনা পাওয়া যায়।
সহজ চাষ
পুরনো চাষের পুকুর হলে পুকুরের পানি অপসারণ করে সম্পূর্ণ শুকিয়ে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে পাড় মেরামত প্রয়োজন। পুকুরে ছায়া প্রদানকারী গাছের ডালপালা থাকলে তা কেটে আলো-বাতাস চলাচলের সুযোগ দিতে হবে। পানি অপসারণ সম্ভব না হলে জাল টেনে সম্পূর্ণ মাছ ধরে ফেলতে হবে এবং প্রয়োজনে নির্ধারিত মাত্রায় 'রোটেনন' প্রয়োগে রাক্ষুসে মাছসহ সব জলজ প্রাণী তুলে নিতে হবে। নতুন পুকুর কাটতে চাইলে তা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের এবং আয়তাকার হওয়া উত্তম। পুকুরের গভীরতা চার থেকে পাঁচ ফুট হওয়া ভালো। পুকুর প্রস্তুতির প্রথম দিকে ৫০০ গ্রাম 'জিওলাইট' প্রতি শতাংশে প্রয়োগের চার থেকে পাঁচ দিন পর ১০ কেজি গোবর সার বা তিন-চার কেজি পোলট্রি বিষ্ঠা প্রয়োগ করতে হবে। এরপর এক থেকে দেড় ফুট পানি প্রবেশ করিয়ে চার-পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এ সময় ঘন ফাঁসের নাইলনের জাল দিয়ে পুকুর ঘিরে দিলে সাপ-ব্যাঙ প্রভৃতি শত্রু থেকে পোনা রক্ষা করা যাবে।
পোনা ছাড়বেন
একক চাষে প্রতি শতাংশে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগমুক্ত স্বাস্থ্যবান এবং একই বয়সী পোনা ছাড়তে হবে। মজুদ পুকুরে বা চাষের পুকুরে এক মাস বয়সী পোনা ছাড়া উত্তম। পোনা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পানি প্রবেশ করাতে পারলে ভালো হয়। ২৪ ঘণ্টা (পোনা ছাড়ার পর) পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
খাবার দেবেন
কৈয়ের জন্য মানসম্মত খাবার সরবরাহ অন্যতম প্রধান শর্ত। অন্যান্য মাছের চেয়ে কৈ মাছের খাবারে প্রোটিনের চাহিদা বেশি থাকে। তা ছাড়া খাবারে প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা বেশি থাকায় এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সাধারণত কৈয়ের খাবারে প্রোটিনের চাহিদা ৩৫ শতাংশ হওয়া আবশ্যক। পোনা বা মাছের আকার, বয়স ও পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী রেডি ফিড (কেবল কৈয়ের জন্য প্রস্তুত) প্রয়োগ করা হলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এ চাষ নতুন বলে সচরাচর প্রয়োজনীয় পুষ্টিসম্পন্ন কৈয়ের খাবার পাওয়া যায় না। কৈ চাষে সাধারণ খাবারের পরিবর্তে অবশ্যই মানসম্মত খাবার সরবরাহ করতে হবে।
চাষ করতে হবে
যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও খাবার নিশ্চিত করা গেলে চার-পাঁচ মাসে কৈ বাজারজাত করা সম্ভব। থাইল্যান্ডে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এ মাছ পাঁচ মাসে প্রতি পাঁচটি কৈ এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। শীতকালে চাষে কৈয়ের বৃদ্ধি কম হয়ে থাকে। তবে মার্চ-এপ্রিল থেকে চাষ শুরু করলে ব্যবস্থাপনাভেদে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি হতে পারে।
পরিচর্যা
* কৈ চাষে পানির গুণাগুণ রক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নিয়মিত পানির (পিএইচ) নির্ণয় করা আবশ্যক।
* ফাইটোপ্লাঙ্কটনের প্রতি কৈ মাছের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। এ কারণে পানিতে ফাইটোপ্লাঙ্কটন ব্লুম থাকা যাবে না। এ রকম সমস্যায় উৎড়ঢ়ঢ়বৎ ব্যবহারে ব্লুম নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কৈ চাষের পুকুরে চাষকালীন সারের তেমন প্রয়োজন নেই।
* কানকো দিয়ে হেঁটে বৃষ্টির সময় অনেক দূর চলে যায়। এ সমস্যা সমাধানে পুকুরের চারদিকে প্লেট শিট টিন বা নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে।
* আমাদের দেশে কৈ চাষে ক্ষতরোগ দেখা গেছে এবং কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ সমস্যা হলেও পুকুর প্রস্তুতি যথাযথভাবে সম্পাদন করার পর চাষকালে প্রতি মাসে একবার পানিতে 'জিওলাইট' এবং ৪০ দিন অন্তর প্রোবায়োটিকস 'গোল্ডেন ব্যাক' প্রয়োগ করা আবশ্যক। তা ছাড়া সমস্যা দেখা দিলে প্রতি শতাংশে প্রতি তিন ফুট পানির জন্য এক কেজি হারে খাবার লবণ প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ধরনের সমস্যায়
খাবারের সঙ্গে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
* যেকোনো সমস্যায় মৎস্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো।
* মানসম্মত খাবার যারা সরবরাহ করতে পারবে তাদের কাছ থেকে রেডি ফিড নেওয়া আবশ্যক। কৈ মাছের জন্য সুপার অ্যাগ্রোফিডস আলাদা ধরনের মানসম্মত খাবার বাজারজাত করছে।
* মানসম্মত পোনা সরবরাহ করা আবশ্যক। অনেকে থাইল্যান্ড থেকে পোনা এনেছিলেন, কিন্তু মৃত্যুর হার বেশি হওয়ায় কেউ কেউ হতাশ হয়েছেন। আমাদের দেশে থাই কৈয়ের পোনা উৎপাদিত হচ্ছে, যা যথেষ্ট মানসম্মত এবং মৃত্যুর হার কম।

Belum ada komentar untuk "থাই কৈ"
Tambahkan komentar anda :